নতুন আইফোনে লাইটনিং চার্জিং পোর্ট ব্যবহার করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছে অ্যাপল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাধ্য করার পর এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার বার্ষিক এক অনুষ্ঠানে আইফোন ১৫ উন্মোচন করার পরে টেক জায়ান্ট জানিয়েছে, ‘বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য মান’ হিসেবে তারা ইউএসবি-সি কেবল ব্যবহার করবে।
অনুষ্ঠানে আরও বেশি উন্নত চিপ সমৃদ্ধ নতুন একটি অ্যাপল ওয়াচ ঘড়িও উন্মোচন করা হয়েছে; কিন্তু একজন প্রযুক্তি বিশ্লেষক বলেছেন, ‘সংবাদ শিরোনাম হতে পারে’ এমন চমক দেওয়ার মতো কোন তথ্য অ্যাপলের কাছ থেকে এবার না আসায় অনেকেই হতাশ হতে পারেন।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক সংস্থা সিসিএস ইনসাইটের বেন উড বলেছেন, আইফোন এবং ওয়াচ যে পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সেখান থেকে নতুন আইফোনটি খুব বেশি চমক জাগানোর মত নয়। এ থেকে বোঝা যায়, আইফোন এবং ওয়াচ ডিভাইসগুলো কতটা পরিমার্জিত হচ্ছে এবং প্রতিবছর সত্যিকার অর্থে বড় কোনো আপডেট নিয়ে আসাটা কতটা কষ্টকর।
অ্যাপল একটি ইউএসবি-সি-টু-লাইটনিং পোর্ট অ্যাডাপ্টর বাজারে এনেছে যার দাম পড়বে ২৯ পাউন্ড বা ৩৬ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার হাজার টাকার মতো।
অ্যাপল জানিয়েছে, বর্তমানে যেসব ইউএসবি-সি কেবল অনেক অ্যাপল ল্যাপটপ ও আইপ্যাডে কাজ করে, সেগুলো নতুন ভার্সনের এয়ারপড প্রো এয়ারফোন এবং তারযুক্ত এয়ারপড হেডফোনের ক্ষেত্রেও কাজ করবে।
নতুন আইফোন হ্যান্ডসেট আগামী সপ্তাহে বাজারে আসবে। এতে ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো বিকল্প একটি চার্জিং পোর্টের ফিচার যোগ করা হলো।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাপলকে তাদের মালিকানাধীন চার্জিং পোর্ট বাতিল করতে বলেছে, যাতে ভোক্তাদের জীবন সহজ হয়, অর্থ সাশ্রয় হয় এবং একই চার্জার ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইসে ব্যবহারের মাধ্যমে ই-বর্জ্য উৎপাদন কমানো যায়।
অনেকে অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, এ পদক্ষেপের কারণে সামনের বছরগুলোতে বাতিল কেবলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
এর প্রতিক্রিয়ায় অ্যাপল মঙ্গলবারের উন্মোচন অনুষ্ঠানে তাদের নতুন ডিভাইসগুলোর বিষয়ে পরিবেশগত কিছু প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাপল ওয়াচ রেঞ্জকে প্রথমবারের মতো কার্বন নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ করা।
নতুন ওয়াচ এবং আইফোনের ব্যাটারি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে রিসাইকেল করা উপাদান আরও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানিটি নিশ্চিত করেছে, তারা তাদের আনুষঙ্গিক কোনো পণ্যে চামড়া আর ব্যবহার করবে না এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তারা তাদের ব্যবসাকে কার্বন নিরপেক্ষ করে তুলবে।
অ্যাপলের প্রধান টিম কুক বলেছেন, নতুন আইফোন ১৫ রেঞ্জটি ‘এ পর্যন্ত তৈরি করা আইফোনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন।
আইফোন ১৫ এবং ১৫ প্লাস-এ স্ক্রিন আরও বেশি উজ্জ্বল করা হয়েছে, ক্যামেরা সিস্টেমও আগের চেয়ে উন্নত।
এছাড়া আইফোন ১৫ প্রো এবং প্রো ম্যাক্সে টাইটানিয়াম ফ্রেম যুক্ত করা হয়েছে, এর মানে হচ্ছে এটির শক্তি আগের তুলনায় বেড়েছে।
প্রো এবং ম্যাক্সে আগের মিউট সুইচ এর জায়গায় এখন একটি ‘অ্যাকশন বাটন’ রয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফাংশন ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা যাবে।
নতুন অ্যাপল ওয়াচে জেশ্চার কন্ট্রোল ফিচার রয়েছে- অর্থাৎ যে হাতে ডিভাইসটি পরা হবে, সেই হাতে দুই আঙ্গুল দিয়ে একসঙ্গে আলতো করে দুটি চাপ দিয়েই পরিধানকারী ব্যক্তি কোন ফোনকলের জবাব দিতে বা সেটি বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন।
নতুন আইফোনগুলো আগের আইফোনগুলোর তুলনায় খুব বেশি আলাদা নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তারা অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, ভোক্তারা কি অতিরিক্ত দাম দিয়ে এগুলো কিনতে রাজি হবেন?